অধিক ডিম উৎপাদনে সক্ষম ৬ টি জাতের মুরগি পালন পদ্ধতি।

অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি করা ও দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য মুরগি পালন অতি আবশ্যক এবং লাভজনক মাধ্যম। উন্নত মানের মুরগি পালন করে যেমন আর্থিক ভবে লাভবান হওয়া যায় তেমনি অধিক পরিমানে ডিম ও মাংস উৎপাদন করা যায় ।

 

 মরগী একটি গৃহ পালিত পাখি যা আমিষের চাহিদা পূরণ করে । মুরগী পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুরগি পালন করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থ আয় করার একটা উপযোগী মাধ্যম।

ভূমিকা: 

মুরগী পালন একটি লাভজনক ব্যাবসা। বর্তমানে বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে মুরগি পালন হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করে থাকে খামারীরা।আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুরগি পালন করলে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদ টি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

 উন্নতমান সম্পন্ন ৬ টি জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

১)লেগহর্ন : ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে পরিচিত হোয়াইট লেগহর্ন। এদের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা সর্বাধিক। মধ্য ইটালির লেগহর্ন নামক স্থান এ জাতীয় মুরগির উৎপত্তি স্থল।বৈশিষ্ট্য -পালক,কানের লতি সাদা ও পায়ের নালা পালক বিহীন। বছরে ২৫০-৩০০ টা ডিম দেয়।পূর্ণ বয়স্ক মোরগ ২-৩ কেজি এবংমুরগি ১.৫-২ কেজি ওজনের হয়।ডিমের খোসা সাদা।

২)ফাউমি : মিশরে এ জাতের উৎপত্তি। এ জাত আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।এরা চঞ্চল ও চালাক।বৈশিষ্ট্য - কানের লতি সাদা ও ঝুঁটি লাল। পালক সাদা-কালো ফোঁটা ফোঁটা রং এর হয়।ঘাড়ের পালক সাদা এবং লেজের শেষাংশ কালো।ডিমের খোসার রং সাদা এবং বছরে ১৮০-২০০ টি ডিম দেয়। পূর্ণবয়স্ক মোরগ ২ কেজি মুরগি ১.৫ কেজি। 

৩)মিনর্কা: উৎপত্তি স্পেনের ভূমধ্যসাগরীয় মিনর্কা দ্বীপে। এদের ৫ টি উপজাত আছে।ভূমধ্যসাগরীয় জাতের মধ্যে এরা বেশী ডিম দেয়।বৈশিষ্ট্য -কানের লতি সাদা,ঝুঁটি একক এবং চামড়া সাদা। এদের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা বছরে প্রায় ২০০ টি। ডিমের খোসা সাদা। পূর্ণবয়স্ক মোরগ ৩-৪ কেজি মুরগি ২-৩কেজি ওজনের হয়।পায়ের নালা পালক বিহীন।

 ৪)অ্যানকোনা: ইতালির শহর অ্যানকোনাতে এদের উৎপত্তি। এ জাতের মুরগি ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়।বৈশিষ্ট্য - কানের লতি সাদা এবং ঝুঁটি একক ও কালো পালকের উপর সাদা ফোঁটা ফোঁটা যুক্ত দাগ আছে। চামড়া হলদে। এরা বছরে প্রয় ২০০ টি ডিম দেয়।ডিমের খোসার রং সাদা। পূর্ণবয়স্ক মোরগ ২.৫-৩ কেজি এবং মুরগি ১.৫-২ কেজি ওজনের হয়

।৫)অস্টালর্প:উৎপত্তি গ্রেট ব্রিটেন। এদের একটি উপজাত আছে।বৈশিষ্ট্য - এদের পালকের রং চকচকে সবুজাভ কালো। ঝুঁটি একক,কানের লতি লাল।চামড়া সাদা।এরা বছরে ১৫০-২০০টি ডিম দিয়ে থাকে এবং খোসার রং বাদামি। পূর্ণবয়স্ক মোরগের ওজন ৩-৪ কেজি এবং মুরগির ওজন ২-৩ কেজি হয়।

৬)সাসেক্স:উৎপত্তিস্থল ইংল্যান্ড।এদের ৩ টি উপজাত আছে।সাসেক্স ডিম ও মাংস উভয়ের জন্য পালন করা যায়।বৈশিষ্ট্য - একক ঝুঁটি এবং কানের লতি লাল।চামড়া সাদও ডিমের খোসার রং বাদামি।পূর্ণবয়স্ক মোরগের ওজন ৩.৫-৪ কেজি এবং মুরগি ৩-৩.৫ কেজি হয়।সাধারনত বছরে ১৫০-২০০ টি ডিম দেয়।উপরক্ত ৬ জাতের মুরগি পালন করে দ্রুত লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব। তবে এই মুরগি পালনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।পালন পদ্ধতি, খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া অতিবজরুরি।

উন্নত জাতের ডিম পাড়া মুরগির উন্নত পালন পদ্ধতি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এ দেশে গ্রামবাংলার মেয়েরা গবাদি পশু-পাখি পালন করে থাকে।এর মধ্যে উল্লেখযগ্য হলো মুরগি।তবে বর্তমানে মুরগি পালন বানিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। বিভিন্ন ভাবে মুরগি পালন করা যায়।এর মধ্যে ৩ টি উপায়ে ডিম পাড়া মুরগি পালন অধিক গ্রহণ যগ্য।

  • খাঁচা পদ্ধতি
  • লিটার পদ্ধতি
  • মাচা পদ্ধতি 

 উক্ত পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা তুলেধরা হলো

খাঁচা পদ্ধতি - খাঁচায় মুরগি পালন সহজ ও স্বস্থ্যস্মত, আধুনিক বিশ্বে দক্ষ ভাবে খাঁচায় মুরগি পালন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশেও বর্তমানে খাঁচা পদ্ধতি অতি জনপ্রিয়। ডিম পাড়া মুরগি খাঁচা পদ্ধতিতে পালন করা উত্তম।বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের খাঁচা কিনতে পাওয়া যায়। যেগুলো মুরগি পালনের উপযোগী। এর মধ্যে কিছু উল্লেখ যোগ্য হলো:একক ডেক খাঁচা, দুই ডেক খাঁচা,ফ্লাট ডেক টাইপ খাঁচা, পিরামিড টাইপ খাঁচা ও বহুতল খাঁচা ইত্যাদি। 

খাঁচায় মুরগি পালনের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধায় পড়তে হয়।তই জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।যেমন:নিয়মিত খাঁচা পরিষ্কার করা,ডিমে রক্তজমা সৃষ্টি হতে পারে এর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া,মুরগির পায়ের নিচে খাঁচার ঘর্ষণে ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও কড়া পরে সেদিকে নজর রাখতে হবে।খাঁচায় পালিত মুরগির হাড় নরম হয় এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর ঘাটতি হয়।তারপরেও খাঁচা পদ্ধতি অধিক জনপ্রিয়।

 লিটার পদ্ধতি - লিটার পদ্ধতিতে কাঠের গুড়া,তুষ,খড়ের ছোট টুকরা ও ছাই ইত্যাদি ঘরের মেঝেতে বিছিয়ে দিয়ে ডিম পাড়া মুরগি পালন করা যায়।লিটার পদ্ধতি ২ প্রকার।যথা: সাধারণ লিটার ও ডিপ লিটার।লিটার পদ্ধতিতে খরচ কম হয়।ঘর শুষ্কও গন্ধ হয় না,ডিমের গুনাগুন ভালো থাকে ও ডিম ভেঙ্গে যায় না ও ডিম উৎপাদন বেশি হয়। পরবর্তীতে লিটার জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মাচা পদ্ধতি - মেঝে থেকে কিছুটা উপরে কাঠের বা বাঁশের তৈরি মাচা ব্যবহার করে ডিম পাড়া মুরগি পালন করা যায়।এই পদ্ধতিতে রোগ ব্যাধি কম হয়। বিছানা বা খাঁচার দরকার হয় না।লিটার পদ্ধতির তুলনায় বেশি মুরগি রাখা যায়।ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে, মাছির উপদ্রব বেশি হয়।মাচার নিচে পরিষ্কার করা কষ্টসাধ্য হয়।নির্মাণ খরচ তুলনা মূলক বেশি হয়। 

 

মুরগির খাদ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে আলোচনা করা হলো 

-ডিম উৎপাদন কারী মুরগির অধিক যত্নের প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন খাদ্য প্রদানের সময় খেয়াল রাখতে হবে খাদ্য টি যেন সম্পূরক খাদ্য হয়।ডিম প্রদান কালে মুরগির খাদ্যের চাহিদা বেশি থাকে।বাংলাদেশে মুরগির সুষম খাদ্য তৈরিতে সাধারণত গমের ভুসি, চালের কুঁড়া,শুটকি মাছের গুঁড়া,তিলের খৈল, হাড়ের গুঁড়া,ঝিনুক চূর্ণ,লবন, শাকসবজি ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 মুরগির সুষম খাদ্য কাকে বলে?

যে খাদ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রতিটি খাদ্য উপাদান উপযুক্ত এবং সমানুপাতিক হারে বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।সুষম খাদ্য আমিষ,শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পানি সঠিক অনুপাত অনুযায়ী বিদ্যমান থাকে। মুরগির সুষম খাদ্যের গুরুত্ব -মুরগির জন্য সুষম খাদ্য অত্যান্ত গুরুতপূর্ণ

।সুষম খাদ্যের ব্যবহারে মুরগির ডিম,মাংস ও বাচ্চা ফুটালোর হার বৃদ্ধি পায়। এ খাদ্যর ব্যবহারে মুরগির অপুষ্টিজনিত এবং অন্যান্য রোগ- বালাই কম হয়।ডিম ও মাংসের গুনগত মান বৃদ্ধি পায়। মুরগি দ্রুত বেড়ে উঠে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।মুরগির মৃত্যু হার হ্রাস পায় ও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়।

মুরগির সুষম খাদ্য তৈরির নিয়মাবলী -

 শক্তির জন্য দানা শস্য ও এর উপজাত ৬০-৬৫%। আমিষের জন্য (ক)প্রনিজ উৎস ৫-১৫%, উদ্ভিদজ্জ উৎস ১৮-২২%।খনিজ মিশ্রণ ২-৯%।খাদ্যপ্রণ/ ভিটামিন; প্রিমিক্স প্রতি ১০০ কেজি মিশ্রিত খাদ্যে ৩ কেজি পাতা বা শাকসবজি।গমভাঙ্গা/ভুট্টা ভাঙ্গা/চাল ভাঙ্গা,গমের ভুসি, তিলের খৈল শুটকি মাছের গুড়া,ব্লাড মিল,সয়াবিন তৈল,লাইসিন, মিথিওনিন ইত্যাদি সঠিক পরিমানে ও সমানুপাতিক ভাবে মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হবে।

মুরগির চিকিৎসা পদ্ধতি

মুরগিকে প্রতিদিন খাদ্য প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।ডিম উৎপাদনের এই মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনা মূলক কম থাকে।তাই খাদ্যের পাশাপাশি ঔষধ সরবরাহ করা অতিব জরুরী। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মুরগির ১৪০ টির বেশি রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। মুরগির স্বাভাবিক অবস্থার যেকোন পরিবর্তনই হলো রোগ।

 ডিম প্রদান কালে মুরগি রোগ আক্রান্ত হতে পারে তাই মুরগির খাদ্যের সাথে প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে, যাতে করে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।তাছাড়া মুরগির বাসস্থান নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।যদি কোন মুরগি রোগাক্রান্ত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেই মুরগি চিহ্নিত করে আলাদা স্থানে রাখতে হবে ও বাকিগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করতে হবে।

 লেখকের মন্তব্য :

 সর্বোপরি, উক্ত ৬ জাতের মুরগি, উপরের আলোচনা করা পদ্ধতি অবলম্বন করে পালন করলে অতি দ্রুত লাভবান হওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের মানুষের মাথা প্রতি আমিষের চাহিদা ৫০৭ গ্রাম আর এই আমিষের চাহিদা পূরণে ডিম ও মাংস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।তাই মুরগি পালন করে দেশের আমিষের চাহিদা যেমন পূরন করা সম্ভব তেমনি আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। অনেক বেকার কর্মসংস্থান করছেন মুরগি পালোনের মাধ্যমে। আশা করি অনুচ্ছেদ টি আপনার ভালো লেগেছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধু দের সাথে সেয়ার করুন ধন্যবাদ।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url