ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি।
সৌন্দর্যের এক প্রতীক হচ্ছে মুক্তা যা শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ ব্যাবহার কর আসছে। আজ ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। মুক্তা এক ধরনের রত্ন যা তৈরি হয় প্রাকৃতিক ভাবে ঝিনুক থেকে সমুদ্রে ও কৃত্রিম ভাবে চাষের মাধ্যমে।
মুক্তা একধরনের শামুক জাতীয় প্রাণী যা ঝিনুকের মাধ্যমে তৈরি হয়।এতি অতি পরিচিত পাথর। বাংলাদেশ এর ব্যবহার ব্যপক আকার ধারণ করেছে।বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মুক্তা চাষ বানিজ্যক রূপ লাভ করেছে। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করা হয় ।
ভূমিকা
বাংলাদেশ বেকারত্বের হার অনেক বেশি, মুক্তা চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। অল্প জায়গায় সল্প পরিসরে মুক্তা চাষ শুরু করা যায়। মুক্তার চাহিদা বেশি থাকার কারনে মুক্তার বাজার অনেক সমৃদ্ধ। ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদে তুলেধরা হলো। আশা করি পুরো অনুচ্ছেদ টি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
মুক্তা কী কী কাজে ব্যবহার হয়?
অলংকার জগৎ মুক্তার রয়েছে অসম্ভব সুনাম। মেয়েদের অলংকার হিসেবে মুক্তার ব্যবহার বেশী হয়ে থাকে। নারী পুরুষের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মুক্তা অতি পরিচিত। মানুষ মুক্তা শরীরে ধারন করেন কারন এর উপকারী নানা দিক রয়েছে। যক্ষা রোগে মুক্তা ব্যবহারিত হয়।
বৃদ্ধ দের শক্তি হীনতা ক্রধ প্রবণত দূর করতে দুধের সাথে মুক্তার গুঁড়া ঔষধ হিসেবে গণ্য। মুক্তা পাথর ধারনে মানুষ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, আধ্যাতিকতার উন্নয়ন ঘটায় ও দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করে তোলে। গর্ভপাত রোধে মুক্তা পাথর সাহায্য করে।এছাড়াও মুক্তার আরও অনেক ব্যবহারিক দিক রয়েছে।
মুক্তার প্রকারভেদ
প্রকারভেদে ঝিনুকের খোলকের অভ্যন্তরে থাকা ক্যালশিয়াম কার্বনেট জৈব যৌগে মুক্তা তৈরি হয়, যা স্তরের কেন্দ্রে সংরক্ষিত থাকে।আদর্শ মুক্তা মসলিন ও গোলাকার হয়ে থাকে। মুক্তা দুই প্রকৃতির প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম। প্রাকৃতিক মুক্তা হলো সামুদ্রিক মুক্তা যা সমুদ্রে হয়ে থাকে। আর কৃত্রিম মুক্তা হলো যেটা চাষ করা হয় সেই মুক্তা ।
আরো পড়ুন : কবুতর পালনের সঠিক পদ্ধতি।
সবচেয়ে ভালো মুক্তা কোন টি?
সবচেয়ে ভালো মুক্তা হলো সামুদ্রিক মুক্তা। যা সমুদ্রের গভীরে হয়ে থাকে। তবে চাষ উপযুক্ত মুক্তার মধ্যে গোলাকার বা পার্ল মুক্তা ভালো। বর্তমানে ডিজাইনার মুক্তার চাহিদাও রয়েছে অনেক। নারীরা অলংকার হিসেবে মুক্তা খুব পছন্দ করে।তাই চাষ করা ডিজাইনার মুক্তা ও ভালো।
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ পদ্ধতি
কৃত্রিম ভাবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ অনেক লাভজনক। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানকার মুক্তার রয়েছে অনেক সুখ্যাতি।চাষের জন্য ঝিনুক নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ ও কালছে রং এর ঝিনুক বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে। চাষের ঝিনুকের বয়স ১ বছরের বেশী হতে হবে। ঝিনুক দেখে বয়স বোঝা যায়, যে হলুদ রং এর দাগ থাকে সেটা বয়স অনুযায়ী বেশি হয়।
ঝিনুক চাষ করার ১ বছর পর মুক্তা তৈরি হয়। মুক্তার জন্য ঝিনুক চাষ করলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় এটি হলো নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন। এই প্রক্রিয়া কে বলে ঝিনুকের অপারেশন। ঝিনুকে নিউক্লিয়াস বসানোর পূর্বে ঝিনুক ও নিউক্লিয়াস দুইটা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এর পর ওপেনার ব্যবহার করে নিউক্লিয়াস বসাতে হবে। এরপর মুক্তা চাষের স্থানে দিতে হবে। ২-২.৫ বছরের মধে মুক্তা পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে।
কোন ঝিনুকে মুক্তা ভালো হয়?
ভালো মুক্তার চাহিদা বর্তমানে প্রচুর পরিমানে। ভালো মুক্তা চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ খুব পরিচিত। সব ঝিনুকে মুক্তা হয় না। যে ঝিনুকে মুখের কাছে হলুদ দাগ থাকে সে ঝিনুকে মুক্তা ভালো হয়। আর যে ঝিনুকে কালো সেড থাকে সেই ঝিনুকের মুক্তা ঝলমলে হয় না। তাই হলুদ দাগ যুক্ত ঝিনুক নির্বাচন করতে হবে। এই ঝিনুক থেকে মুক্তা তুলনা মূলক ভালো হয়।
পুকুরে মুক্তা চাষ পদ্ধতি
পুকুরের মুক্তা চাষ বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশের বেশিভাগ স্থানে পুকুরে মুক্তা চাষ করে থাকে।পুকুরে মুক্তা চাষের ক্ষেত্রে PH সঠিক মাত্রায় করে নিতে হবে। পুকুরে ঝিনুক ২-৩ ফিট গভীরে রাখতে হবে। PH ৫-৮ এর মধ্যে হলে ভালো হয়। যদি কমে যায় তাহলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পানিতে অ্যামনিয়ার মাত্রা বেড়ে গেলে মই টেনে দিতে হবে। পুকুরে ঝিনুকের খাদ্য হিসেবে গোবর সার,খৈল ও টিএসপি সার দিতে হয় এতে পুকুরে প্লাংটন তৈরি হয়, এই প্লাংটন ঝিনুক খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে। পুকুরের পানি সবসময় পরিষ্কার রাখা জরুরি। এতে মুক্তার ফলন ভালো হয়।
মুক্তা চাষ করতে কত সময় লাগে?
মুক্তা চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। মুক্তা দুই ধরনের ডিজাইনার মুক্তা ও গোল বা পার্ল মুক্তা ডিজাইনার মুক্তা নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের পরে ১০-১১ মাসে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর বেশি সময় হলে ডিজাইন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে গোল বা পার্ল মুক্তা পরিপূর্ণ হতে ২-২.৫ বছর সময় নেয়।
বাংলাদেশে মুক্তার বাজার
মুক্তার চাহিদা বিশ্ব ব্যাপি রয়েছে তাই এর বাজার চাহিদা অনেক। ঝিনুক যদি নিজের সংগ্রহে থাকে তাহলে প্রতিটি ঝিনুকে খরচ হয় ২৫-৩০ টাকা আর পরিপূর্ণ একটি ঝিনুক থেকে ২ টি করে মুক্তা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য ১২০০-২০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিদেশে মুক্তার প্রচুর চাহিদা থাকায়, বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়।
লেখকের মন্তব্য
ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষ করে ব্যাক্তিগত ভাবে যেমন লাভবান হওয়া যায় তেমনি দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখা যায়।মুক্তা চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। অনুচ্ছেদ টি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে সেয়ার করবেন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url